বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ১০:৩১ পূর্বাহ্ন
ভয়েস অব বরিশাল ডেস্ক॥ করোনার সংক্রমণ বাড়ায় সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী অর্ধেক আসন ফাঁকা রেখে গণপরিবহন চলাচল করায় দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে যাত্রীসাধারণকে। জনদুর্ভোগ কমাতে কিছু কিছু কোম্পানি বাসের সংখ্যা বাড়ালেও কমেনি ভোগান্তি। আসন সংকটে বৃহস্পতিবার অফিসগামী মানুষকে পড়তে হয়েছে দুর্ভোগের মুখে।
ঢাকা বিমানবন্দর, মহাখালী, কাকরাইল, শাহবাগ, পল্টন, প্রেসক্লাব ও গুলিস্তান এলাকায় বিপুল সংখ্যক যাত্রীকে দীর্ঘ সময় বাসের অপেক্ষায় থাকতে দেখা গেছে। ক্ষুব্ধ যাত্রীরা সকালে রাজধানীর ক্ষিলখেতে রাস্তা আটকে বিক্ষোভও করেছেন।
অন্যদিকে রাইড শেয়ারিং সার্ভিসে মোটরসাইকেলে যাত্রী পরিবহনে নিষেধাজ্ঞার প্রতিবাদে রাজধানীর অনেক জায়গায় বিক্ষোভ মিছিল করেছে পাঠাও উবারের চালকেরাও।
যদিও যাত্রীদের এমন দুর্ভোগসহ অন্যান্য ভোগান্তি নিয়ে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সবাইকে ধৈর্য ধরার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, জনস্বার্থেই অর্ধেক আসন খালি রেখে স্বাস্থ্যবিধি মেনে গণপরিবহন চলছে। এমন পরিস্থিতিতে অস্থিরতা প্রদর্শন না করে নিজেদের সুরক্ষার স্বার্থে অর্ধেক আসন খালি রেখে চলাচলের সিদ্ধান্ত মেনে চলতে হবে।
বৃহস্পতিবার বিকেলে সরকারি বাসভবনে ব্রিফিংকালে কাদের বলেন, অতিরিক্ত ভাড়া আদায়কারী এবং নির্দেশনা প্রতিপালনে ব্যর্থ পরিবহনের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য বিআরটিএ এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে কঠোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
গণপরিবহন যেন নতুন করে করোনা সংক্রমণের ক্ষেত্র হিসেবে বিস্তৃতি ঘটাতে না পারে সেদিকে সবাইকে নজর দেয়ারও আহ্বান জানান মন্ত্রী।
সরেজমিনে দেখা গেছে, অফিসগামী যাত্রীরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকেও বাসে উঠতে না পেরে প্রতিবাদ জানাতে সকাল ৯টার দিকে খিলক্ষেতে রাস্তা অবরোধ করলে পুরো বিমানবন্দর সড়কে যানবাহনের দীর্ঘ জট সৃষ্টি হয়। কুড়িল ফ্লাইওভার-বনানী থেকে উত্তরা পর্যন্ত সড়কে যান চলাচল স্থবির হয়ে পড়ে।
যাত্রীদের অভিযোগ, সরকারের বিধি-নিষেধের সুযোগ নিয়ে পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা কৃত্রিম সঙ্কট তৈরি করেছে। আর সঙ্কট তৈরি করে দুই থেকে তিনগুণ ভাড়া বেশি আদায় করছে।
সকাল ১০টার দিকে কারওয়ান বাজারে দেখা যায়, অন্তত ৫০ জন যাত্রী দাঁড়িয়ে আছেন। কিন্তু বাসের দেখা নেই। যাত্রীদের অভিযোগ, অন্যদিন বাসে যাত্রী তোলার জন্য চালকের সহকারীরা ডাকাডাকি করত, এখন পরিস্থিতি পুরো উল্টো।
তবে বাসের সঙ্কট আর ভাড়া নিয়ে যাত্রীরা অভিযোগ করলেও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ক্ষেত্রে তাদের উদাসীনতা দেখা গেছে। বাস চালক বা সহকারীরাও এর ব্যতিক্রম ছিলেন না।
করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে সরকার ১৮ দফা নির্দেশনা জারি করার পর বুধবার থেকে অর্ধেক আসন খালি রেখে গণপরিবহন চালানোর সিদ্ধান্ত হয়। রাজধানীর বেশির ভাগ রুটে বেসরকারি যে মিনিবাসগুলো চলাচল করে সেগুলো কমবেশি ৫০ আসনের। সরকারি নির্দেশনা পাওয়ার পর অর্ধেক আসন খালি রেখে ৬০ শতাংশ ভাড়া বাড়িয়ে সেগুলোর যাত্রী পরিবহন করার কথা।
অফিস-আদালত, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খোলা রেখে বাসে কম যাত্রী পরিবহনের এ নির্দেশনায় রাজধানীবাসী বিপাকে পড়েছে বলে মনে করছেন সবাই। মিজানুর রহমান নামে এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, সকালে অফিস টাইমে লোকজন বাসে উঠতে না পেরে কিছুক্ষণ রাস্তা আটকে রাখে। পরে পুলিশ এসে সবাইকে বাসে উঠিয়ে দিলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।
এ বিষয়ে খিলক্ষেত থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুন্সী ছাব্বীর আহম্মদ বলেন, ‘করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বাড়ায় বাসগুলো অর্ধেক যাত্রীর বেশি তুলছে না। ফলে অফিসগামী মানুষরা অনেকেই বাসে উঠতে পারছেন না। এতে তারা ক্ষুব্ধ হয়ে খিলক্ষেত ওভার ব্রিজের নিচে রাস্তা বন্ধ করে অবস্থান নেন।’
মিরপুর থেকে গুলিস্তানে যাবেন সাইফুল আসলাম নামে এক ব্যাংক কর্মকর্তা। তিনি বলেন, ‘ঘণ্টাখানেক অপেক্ষার পর তিনি বাস পেয়েছেন। ৩০ টাকার ভাড়ার বদলে গুণতে হয়েছে ৭০ টাকা। ভাড়া আরো ১০ টাকা বেশি নিলেও উঠতে হত। আমার মনে হয়, একটা কৃত্রিম সঙ্কট তৈরি করা হয়েছে। যাতে ভাড়া বেশি দিতে হয়।’
তেজগাঁও থেকে কাকরাইলে আসা মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন বলেন, আমরা তেজগাঁও থেকে কাকরাইল মোড়ে যাই ১০ টাকা দিয়ে। আজকে গাজীপুর পরিবহনে এসেছি। সব সময় তারা ১০ টাকা ভাড়া নেয়, আজকে নিয়েছে ৩০ টাকা। আধা ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকে বাস পেয়েছি, সেখানে আবার ভাড়া বেশি। আমার মনে হয় ভাড়া বেশি নিতেই তারা রাস্তায় বাস কম নামিয়েছে।
তবে বাসের কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টির অভিযোগ মানতে রাজি নন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্যাহ। তিনি বলেন, সঙ্কট কেন হবে? বাস যা ছিল তাই রাস্তায় আছে।
ভাড়া বেশি নেয়ার অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, বাস ভাড়া বেশি নিলে বিআরটিএ-র ভ্রাম্যমাণ আদালত শাস্তি দেবে। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, যাত্রীরা মাস্ক ছাড়াই বাসে চড়ছেন। চালক ও সহকারীর মুখের পরিবর্তে থুতনিতে মাস্ক ঝুলতে দেখা গেছে। বেলা ১১টার দিকে শাহবাগ মোড়ে সাভার পরিবহনের একটি বাসে দেখা যায় বেশিরভাগ যাত্রীর মুখে মাস্ক নেই।
এদিকে রাইড শেয়ারিং সেবা বন্ধের প্রতিবাদে রাজধানীর ধানমন্ডি ২৭ নম্বর, কারওয়ান বাজার, শাহবাগসহ কয়েকটি এলাকায় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছে মোটরসাইকেল চালকরা। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে কারওয়ান বাজারে এ বিক্ষোভ শুরু হয়। পরে বেলা পৌনে ১২টার দিকে ধানমন্ডি ২৭ নম্বরে প্রধান সড়ক বন্ধ করে অবস্থান নেন অর্ধশতাধিক মোটরসাইকেল চালক।
এ সময় ২৭ নম্বর প্রধান সড়কে মোটরসাইকেল আড়াআড়ি করে রেখে সড়কে যান চলাচল বন্ধ করে দেন চালকরা। এতে পুরো সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। তীব্র যানজট সৃষ্টি হয় সড়কের দুই পাশেই। পরে পুলিশ তাদের বুঝিয়ে রাস্তা থেকে সরিয়ে দিলে ১০-১৫ মিনিটের মধ্যেই সড়কে আবারও যান চলাচল শুরু হয়।
করোনা সংক্রমণের বিদ্যমান পরিস্থিতিতে রাইড শেয়ারিংয়ে মোটরসাইকেলে যাত্রী পরিবহনে নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা আসে গতকাল বুধবার। এ নিষেধাজ্ঞা আপাতত দুই সপ্তাহের জন্য বা পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত বহাল থাকবে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের রমনা বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার হারুন অর রশীদ বলেন, বেলা পৌনে একটা থেকে একটা পর্যন্ত পাঠাও, উবারের চালকেরা শাহবাগ মোড়ে বিক্ষোভ করেন। এ সময় শাহবাগ মোড় দিয়ে সীমিত আকারে যান চলাচল করে।
রাইড শেয়ারিং সার্ভিসে যাতায়াত করেন ব্যাংকার জাহানারা হাসিনা। তিনি বলেন, একদিকে বাসের ভাড়া বেড়ে গেছে। তার ওপর যাত্রীদের চাপ অনেক বেড়েছে। যাতায়াত করবো কিভাবে কিছুই মাথায় আসছে না।
Leave a Reply